সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৩ পূর্বাহ্ন
তরফ স্পোর্টস ডেস্ক : ধারার বাইরে গিয়ে টস জিতে ব্যাটিং আর ওপেনিং জুটিতে নতুনত্ব, ম্যাচের শুরুতে তাক লাগিয়ে দিল ঢাকা। কিন্তু কৌশলের চমক রূপ নিল না ব্যাটে-বলে। ২২ গজে পেশাদার পারফরম্যান্সে তাদের অনায়াসেই হারিয়ে ফাইনালের মঞ্চে পা রাখল চট্টগ্রাম।
বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে বেক্সিমকো ঢাকার বিপক্ষে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের জয় ৭ উইকেটে।
আসর জুড়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করা বোলিং লাইন আপ এদিনও গড়ে দেয় চট্টগ্রামের জয়ের ভিত। টুর্নামেন্টের সেরা বোলার মুস্তাফিজুর রহমান ধারাবাহিকতা ধরে রেখে নেন ৩ উইকেট। আরেক বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলামের শিকার দুটি। সঙ্গে অন্যদের কার্যকর বোলিং ও দারুণ ফিল্ডিং যোগ হয়ে ঢাকা আটকে যায় ১১৬ রানেই।
রান তাড়ায় কোনো তাড়াহুড়ো করেনি চট্টগ্রাম। ম্যাচের লাগাম হাতে রেখে জিতে যায় তারা ৫ বল বাকি রেখে।
বিকেল সাড়ে চারটার শুরু হওয়া ম্যাচে ঢাকা বিস্ময় উপহার দেয় টস জিতে। টুর্নামেন্টের আগের ২২ ম্যাচের ২১টিতেই টস জয়ী দল নিয়েছে বোলিং। রাতের শিশিরে পরে বোলিংয়ের চ্যালেঞ্জকে উপেক্ষা করে ঢাকা নেয় আগে ব্যাটিং।
এরপর সাব্বির রহমানের সঙ্গে তারা ওপেন করতে পাঠায় মুক্তার আলিকে। কিন্তু কাজে লাগেনি কোনো ফাটকাই।
ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসানকে দুটি বাউন্ডারিতে সাব্বির আভাস দেন ভালো শুরুর। তবে আভাস রূপ পায়নি পূর্ণতায়। সাব্বিরই (১১ বলে ১১) বিদায় নেন আগে। শরিফুল ইসলামের শর্ট বল পুল করে তুলে দেন শর্ট মিড উইকেট ফিল্ডারের হাতে।
মুক্তারকে নিয়ে বাজি শেষ পরের ওভারেই। নাহিদুল ইসলামকে উইকেট দিয়ে আসেন তিনি ৭ বলে ৭ রান করে।
পাওয়ার প্লেতে টানা ২০ বল ঢাকা দেখা পায়নি বাউন্ডারির। মুস্তাফিজের প্রথম ওভারে আপার কাটে ছক্কা মেরে মোহাম্মদ নাঈম শেখ চেষ্টা করেন শেকল ভাঙার। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ১৭ বলে ১২ করে তিনি ফেরেন রকিবুলের বলে সীমানায় ধরা পড়ে।
আগের ম্যাচগুলোয় বেশকবার এমন বিপর্যয় থেকে ঢাকাকে উদ্ধার করেছেন ইয়াসির আলি চৌধুরি, মুশফিক, আকবর আলিরা। এ দিনও ইয়াসির ও মুশফিকের জুটি জমে উঠতে শুরু করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দিনটি তাদের ছিল না।
৩০ বলে ২৫ করে মুশফিক আউট হয়ে যান প্রিয় সুইপ শটে, মোসাদ্দেক হোসেনের বলে দারুণ ক্যাচ নেন রকিবুল।
ফর্মে থাকা ইয়াসির শুরু করেন সাবলীলভাবেই। রকিবুলকে ছক্কা মারেন চোখধাঁধানো এক ইনসাইড আউট শটে। ২৪ রানে (২১ বলে) তাকে কাটারে থামান মুস্তাফিজ।
এরপর রান যা একটু বাড়ান কেবল আল আমিন। দুই ছক্কায় তার ব্যাট থেকে আসে ১৮ বলে ২৫। মুস্তাফিজকে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে শেষ হয় তার ইনিংস।
ঢাকার শেষ ৫ ব্যাটসম্যানের কেউ ৩ রান পেরোতে পারেননি। ১২ রানের মধ্যে হারায় তারা শেষ ৫ উইকেট।
ওই পুঁজি নিয়ে লড়াই করা কঠিন। ঢাকা নিজেদের কাজ আরও কঠিন করে ফেলে ক্যাচ ছেড়ে। রুবেল হোসেনের করা ইনিংসের প্রথম ওভারেই স্লিপে লিটন দাসের ক্যাচ ফেলেন নাঈম।
ঢাকার বোলাররা পারেনি সৌম্য-লিটনকে আলাদা করতে। ৪৪ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে সৌম্যর রান আউটে (২০ বলে ২৭)।
লিটন ও মোহাম্মদ মিঠুন এরপর ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে এগিয়ে নেন দলকে। একসময় মনে হচ্ছিল, এই জুটিতেই জিতে যাবে চট্টগ্রাম। কিন্তু জয়ের কাছে গিয়ে বিদায় নেন দুজনই।
৪৯ বলে ৪০ করে লিটন লং অন সীমানায় ধরা পড়েন সাব্বিরের হাতে। ডিপ মিড উইকেটে সাব্বিরের দুর্দান্ত ক্যাচেই শেষ হয় মিঠুনের ইনিংস (৩৫ বলে ৩৪)। তবে জিততে কোনো সমস্যা তাদের হয়নি।
প্রাথমিক পর্বে ৮ ম্যাচের ৭টিতে জয়ী চট্টগ্রাম হোঁচট খেয়েছিল প্রথম কোয়ালিফায়ারে জেমকন খুলনার কাছে হেরে। পরের সুযোগে তারা পৌঁছে গেল ফাইনালে। শুক্রবার ট্রফির লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ সেই খুলনা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বেক্সিমকো ঢাকা: ২০ ওভারে ১১৬ (সাব্বির ১১, মুক্তার ৭, নাঈম ১২, মুশফিক ২৫, ইয়াসির ২৪, আল আমিন ২৫, আকবর ২, রবি ৩*, নাসুম ০, রুবেল ২, শফিকুল ০; শরিফুল ৪-০-১৭-২, রকিবুল ৪-০-২৬-১, নাহিদুল ৪-০-১৫-১, মুস্তাফিজ ৪-০-৩২-৩, মোসাদ্দেক ৩-০-২২-১, সৌম্য ১-০-৩-১)।
গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম: ১৯.১ ওভারে ১১৬/৩ (লিটন ৪০, সৌম্য ২৭, মিঠুন ৩৪, শামসুর ৯*, মোসাদ্দেক ২*; রুবেল ৪-০-১৯-০, রবি ৩-০-২৮-০, শফিকুল ৪-০-১৯-০, নাসুম ৪-০-১৭-০, মুক্তার ৩-০-২৮-১, আল আমিন ১.১-০-৪-১)।
ফল: গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মুস্তাফিজুর রহমান।